১ মে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস। বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় ৮০টি দেশে এই দিনটি জাতীয় ছুটি ঘোষণা রয়েছে। দিবসটির উদ্দেশ্য বিশ্বজুড়ে শ্রমিকদের অবদান তুলে ধরা এবং অধিকার নিশ্চিত করা। প্রতিবছরের মতো এবারও প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে দিবসটি পালিত হচ্ছে। এবারের দিবসটি শ্লোগান হচ্ছে ‘শ্রমিক-মালিক একতা, উন্নয়নের নিশ্চয়তা’।
ভারতে ১৯২৩ সালে প্রথম পালিত হয় দিবসটি। হিন্দুস্তান লেবার কিসান পার্টি প্রথমবারের মতো দিনটি পালন করে। যার নেতৃত্বে ছিলেন কমরেড সিঙ্গারাভেলার। কঠোর শ্রমের বিধিবিধান, অধিকার লঙ্ঘন, খারাপ কাজের পরিস্থিতির প্রতিবাদের সোচ্চার হয়ে উঠে শ্রমিকরা। মালিকপক্ষের শোষণের পক্ষে তারা প্রতিবাদ করে। এরপরই শ্রমঘণ্টা নির্ধারিত হয় ৮ ঘণ্টা। শ্রমঘণ্টা নির্ধারণের পাশাপাশি আদায় হয় তাদের দাবি-দাওয়া। সেই থেকেই মে দিবসটি শ্রমিকদের নামেই উত্সর্গ রয়েছে।
আন্তর্জাতিক এই মে দিবসে সব শ্রমিকের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে অনুষ্ঠান বা কর্মসূচির আয়োজন হয় জাতীয় পর্যায়েও। এমন আয়োজনের অংশীদার হতে পারেন আপনি। এই দিনটিতে সব শ্রমজীবী মানুষদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। কর্মস্থলে বা বাড়িতে শ্রম দেওয়া মানুষদেরকে শুভেচ্ছা জানাতে পারেন। দিনটিকে তাদের মতো করেই উদযাপন করতে দিন। স্বাধীনতার স্বাদ পেলে তারাও আপনার কাজে একাত্ম হয়ে শ্রম দিবে।

বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের শ্রমজীবী মানুষ এবং শ্রমিক সংগঠনসমূহ রাজপথে সংগঠিতভাবে মিছিল ও শোভাযাত্রা করে। দিনটি পালনের অংশ হিসাবে একে অন্যকে শুভেচ্ছা বার্তাও দেয়। আপনিও শুভেচ্ছা বার্তা দিতে পারেন।
শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও লিখতে পারেন, “কঠিন পরিশ্রমের ফল একদিন পাবেনই। সৌভাগ্য হয়ে আসবে এই কঠিন পরিশ্রম। মহান মে দিবসের শুভেচ্ছা।“
শ্রমজীবী মানুষকে সম্মান জানিয়ে প্ল্যাকার্ডের মাধ্যমে উপস্থাপন করতে পারেন কঠিন পরিশ্রমেও যে তৃপ্তি পাওয়া সম্ভব। লিখতে পারেন, “কঠিন পরিশ্রমের সঙ্গেই আসুক তৃপ্তি। রইল আন্তর্জাতিক মে দিবসের শুভেচ্ছা।’

শ্রমিকদের অবদান ও ঐতিহাসিক শ্রমিক আন্দোলনের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে লিখতে পারেন, “মে দিবস হল সেই দিন, যেদিন আমরা চারপাশের কঠোর পরিশ্রমী মানুষদের শ্রম ও উৎসর্গকে স্মরণ করি। সবাইকে মে দিবসের শুভেচ্ছা।’
কর্মস্থলে ব্যানারে বা প্ল্যাকার্ডে শ্রমিকদের শুভেচ্ছা জানাতে পারেন, লিখতে পারেন- ‘সকল কর্মজীবী মানুষদের আগামী দিন শুভ হোক। তাই সবাইকে জানাই শ্রমিক দিবসের শুভেচ্ছা।“ কিংবা “আপনাদের মতো কর্মীরাই দেশকে আলোকিত করবে। শ্রমিক দিবসের শুভেচ্ছা’, ‘প্রতিটি শ্রমজীবী মানুষের অধিকার অক্ষুন্ন থাকুক। দূর হোক সকল বৈষম্য। রইল শ্রমিক দিবসের শুভেচ্ছা’, ‘শ্রমিকদের যোগদান ছাড়া এই পৃথিবী গড়ে তোলা সম্ভব নয়। সেই সব শ্রমিককে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসের শুভেচ্ছা।’
শ্রমিকদের কাজের অনুপ্রেরণা দিয়ে লিখতে পারেন, “একমাত্র শ্রমের মাধ্যমেই সাফল্য সম্ভব। তাই আজ থেকেই শুরু হোক কঠিন পরিশ্রম। রইল মে দিবসের শুভেচ্ছা“, “কোনও কাজই ছোট নয়। তাই লক্ষ্যের প্রতি এগিয়ে যাওয়ার জন্য সব ধরনের কাজের প্রতি রইল সম্মান। শুভ আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস।"
আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসটি যেভাবে এলো_
১৮৮৬ সালে আমেরিয়ায় শুরু হয় শ্রমিক অসন্তোষ। সেই সময় কর্মচারীরা কঠোর শ্রম, অধিকার লঙ্ঘন ও কাজের খারাপ পরিবেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে। আন্দোলনের মাধ্যমে এই প্রতিবাদ বিশাল আকার নেয়। শিকাগোর হে মার্কেটে দৈনিক ৮ ঘণ্টা কর্মসময় ও ন্যায্য মজুরির দাবিতে বিক্ষোভ করে স্থানীয় শ্রমিকরা। শ্রমিকদের দমাতে মিছিলে গুলি চালায় পুলিশ। নিহত হন ১১ শ্রমিক এবং আহত হন বহু শ্রমিক। ওই সময় আন্দোলনরত বহু শ্রমিককে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার হওয়া শ্রমিকদের মধ্যে ৬ জনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। ওই ঘটনায় শ্রমিক অসন্তোষ আরও তীব্রতর হয়ে উঠে। অবশেষে বিজয় পায় শ্রমিকরা। মালিকপক্ষ শ্রমিকদের দাবি মেনে নিয়ে ন্যায্যা অধিকার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
এরপর ১৮৮৯ সালের ১৪ জুলাই ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে ১লা মে শ্রমিক দিবস হিসেবে ঘোষণা হয়। তবে বিশ্বব্যাপী ‘মে দিবস’ বা ‘আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস’ হিসেবে পালন হয়ে আসছে ১৮৯০ সাল থেকে। যার ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশেও দিবসটি উদযাপন হয় বিভিন্ন কর্মসূচিতে।